আমাদের মনে সবসময় আপনজনদের কাছে থাকার একটা ইচ্ছা কাজ করে। সময়, দূরত্বের সাথে সেই ইচ্ছাটা আরো বাড়তে থাকে। খুব কাছের কারো কণ্ঠ বা মোবাইল স্ক্রিনে মুখ ভেসে উঠলে মনে হয়; যেন বুকে প্রাণ ফিরে এলো। দূরে থেকেও আপনজনদের কাছে থাকার স্বপ্নপূরণের সেই ইচ্ছাকে সম্ভব করতে গ্রামীণফোন তার যোগাযোগের সেবা নিয়ে বাংলাদেশের পাশে আছে।
২০১৯ সালের নভেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। খুব দ্রুত তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এক ভয়াবহ মহামারী আকার ধারণ করে। দেশে করোনাভাইরাস-এর বিস্তার রোধ ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে গ্রামীণফোন তার সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নেয়। করোনা সংক্রান্ত তথ্য জানতে আইইডিসিআর হটলাইন ১৬২৬৩, ১০৬৫৫ ও ৩৩৩ নম্বরে যেকোনো গ্রামীণফোন নম্বর থেকে ফ্রি কল-এর ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় আমরা গ্রাহকদের জনসমাগম এড়িয়ে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে থাকার বার্তা 'Stay Home' পৌঁছে দেই আমাদের নেটওয়ার্কে থাকা সাড়ে সাড়ে সাতকোটির গ্রাহকের কাছে।
বাংলাদেশ মহামারী শুরুর প্রথম দিকে সরকারের আইসিটি ডিভিশন, a2i, গুগলের সাথে সমন্বিতভাবে আমরা 'বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ' ক্যাম্পেইন শুরু করি। ক্যাম্পেইনে সবাইকে ঘরে থেকেই নিজ নিজ এলাকার হাসপাতাল, নিত্যপণ্যের বাজার, মোবাইল ব্যালেন্স রিচার্জ, নগদ/বিকাশ পয়েন্ট এর মত গুরুত্বপূর্ণ লোকেশনগুলো পিন করার অনুরোধ জানাই যাতে অন্যরা তা সহজেই খুঁজে পান। এ উদ্যোগে আমরা আশানুরূপ সাড়া পাই। http://www.bangladeshchallenge.com/ থেকে এই পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী: ৩১ হাজার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ১৬২১ গুগল লিংক ও ৮৩৫ ওপেন স্ট্রিট ম্যাপ লিংক ছিল এবং ৪২ হাজার ম্যাপ পোস্ট গ্রহণ করা হয়েছে।
করোনা আক্রান্তের সেবায় সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসকগণ। ডিজিএইচএস স্বীকৃত করোনা চিকিৎসার হাসপাতালগুলোতে কর্মরত চিকিৎসকদের জন্য গ্রামীণফোন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫০,০০০ ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (PPE) হস্তান্তর করেছে।
হাসপাতালগুলোতে কর্মরত চিকিৎসকগণ যেন সবসময় পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে তাদের জন্য প্রতি মাসে মাত্র ১ টাকায় ৩০GB ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা হয়। এই বিশেষ সুবিধা ডিজি হেলথ নিবন্ধিত ২৫,০০০ চিকিৎসকদের জন্য পরবর্তী ছয় মাস কার্যকর থাকবে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে আমাদের অনেক গ্রাহক ব্যালেন্স রিচার্জ করতে পারেননি, তাঁদের কাছে জরুরী যোগাযোগের সেবা পৌঁছে ডিতে ১০ কোটি মিনিট টকটাইমের বাবস্থা বিনামূল্যে করা হয়। পাশাপাশি তাদের সংযোগের মেয়াদও ৩১ মে, ২০২০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
রাষ্ট্রবাবস্থা থেকে শুরু করে, বাণিজ্য, শিক্ষা, জরুরী সেবা সব কিছুই এখন চলছে ইন্টারনেটের উপর ভর করে। আমরা গভীরভাবে অনুভব করেছি সবার জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য করলে, আমরা এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারবো। প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম, নিত্যপণ্যের হোম ডেলিভারি, আর্থিক লেনদেন, শেয়ারিং- সবই চলছে ইন্টারনেটে। জীবনও থেমে নেই- চলছে, চলবে। নতুন এই নিউ নরমালে অভ্যস্ত হতে আমাদের উৎসাহ যুগিয়েছে ইন্টারনেট। আপনজনদের সাথে দূরত্বটা এখন একটা মেসেজ বা ভিডিও কলে কমিয়ে আনা সম্ভব।
MyGP অ্যাপের সাপ্তাহিক ইন্টারনেট প্যাকগুলোতে গ্রাহকদের ১০০% বোনাস ইন্টারনেট দেওয়া হয় যাতে তারা বাইরে না গিয়েও অনলাইন রিচার্জ বা ইন্টারনেট প্যাক কেনার মত সুবিধাগুলো পেতে পারেন।
প্রাণঘাতী এই মহামারী থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে যা যা করণীয় আমরা তার সবই করবো। মানুষ মানুষের জন্য- মানবতার এ মহান সত্যটিকে সমুন্নত রেখে দেশের এই দুঃসময়ে সবার পাশে থাকার প্রত্যয় আমরা আছি এবং থাকবো।
এর পাশাপাশি গ্রামীণফোনের সকল গ্রাহকদের জন্য ৪৮ টাকা রিচার্জে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত যেকোনো মোবাইল নম্বরে ৪৮ পয়সা/মিনিট রেটে কথা বলার সুবিধাও নিশ্চিত করা হয়।
করোনা মহামারীতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা সহযোগী রিটেইলারদের জন্য ১০ কোটি টাকার নিরাপত্তামূলক ক্রেডিট স্কিম গ্রহণ করা হয়, যাতে তারা এ দুর্দিনেও ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন।
আমাদের বিশ্বাস গৃহীত উদ্যোগগুলো এই দুঃসময়ে যেসকল গ্রাহক আপনজনদের থেকে দূরে আছেন তাদের জন্য কিছুটা হলেও প্রিয় মানুষগুলোর কাছে থাকার সুযোগ করে দেবে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু মানুষ কখনোই কোনও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কাছে হার মানেনি। জীবন থেমে থাকেনি- পুরনো অভ্যাস গুলোকেই আমরা মেনে নিয়েছি নতুনের মোড়কে।
ডিজিটাল সার্ভিসেস:
নতুন এই স্বাভাবিকের জার্নিতে দেশের প্রতিটি প্রান্তে আপনাদের নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে গ্রামীণফোন পরিবারের প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আসুন আমরা দূরে থেকেও পাশে থেকে, একসাথে দেশটাকে ভালো রাখি।
আমাদের উপর আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ।
করোনাভাইরাস (SARS-CoV-2) ও কোভিড-১৯ কি?
করোনাভাইরাস হচ্ছে ভাইরাসগুলির একটি বৃহৎ পরিবারের যা সাধারণ সর্দি কাশি থেকে শুরু করে মারাত্মক অসুখ করতে পারে, যেমন Middle East Respiratory Syndrome (MERSE-CoV), Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS-CoV) এবং কোভিড-১৯ (COVID-19)।
করোনাভাইরাসের অনেকগুলো প্রজাতির মাঝে ৭টি প্রজাতি মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করে যার মাঝে SARS-CoV অন্যতম। করোনাভাইরাসগুলি জুনোটিক, যার অর্থ তারা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ করতে পারে।
COVID-19 নামক রোগ সৃষ্টিকারী SARS-CoV-2 করোনা ভাইরাস একটি নতুন প্রজাতি যা ইতিপূর্বে মানব শরীরে দেখা যায়নি। এটি একটি এনভেলপড, পজিটিভ সেন্স, সিঙ্গেল স্ট্র্যান্ড আরএনএ ভাইরাস।
লক্ষণ সমূহ
- ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে সাধারণত ২-১৪ দিন লাগে
- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষণ জ্বর (১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর বেশী)
- এছাড়া শুকনো কাশি/গলা ব্যথা হতে পারে
- শ্বাসকষ্ট/নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে
- অন্যান্য অসুস্থতা (ডায়াবেটিস/উচ্চ রক্তচাপ/শ্বাসকষ্ট/হৃদরোগ/কিডনি সমস্যা ইত্যাদি) থাকলে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে
প্রতিরোধে করণীয়
- বারবার অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবত সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
- অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
- হাঁচি বা কাশির সময় বাহু, টিস্যু অথবা কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ ঢেকে রাখুন।
- সমাবেশ বা ভিড় এড়িয়ে চলুন।
- সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। একে অন্যের থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।
- একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থেকে, নিজে নিরাপদে থাকুন, কাছের মানুষেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
- সব ধরনের ভ্রমণ হতে বিরত থাকুন এবং সম্প্রতি বিদেশ থেকে ফিরলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকুন।
- যেখানে সেখানে থুথু বা কফ ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
- কোয়ারেন্টাইনকৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
- ইতোমধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
জরুরি অবস্থায় করণীয়
- অসুস্থ রোগীকে হোম কোয়ারেন্টাইন বা আলাদা রাখুন।
- করোনা আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে ১৬২৬৩ , ৩৩৩ নম্বরে অথবা IEDCR এর হটলাইন এ যোগাযোগ করুন। (১৬২৬৩ ও ৩৩৩ নম্বরে গ্রামীণফোন গ্রাহকরা ফ্রি কল করতে পারবেন)
করোনাভাইরাস সম্পর্কে সর্বশেষ আপডেট পেতে এখানে ক্লিক করুন
সচেতনতার মাধ্যমেই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
কিভাবে করবেন
প্রয়োজনে সাহায্য পেতে